এম ফেরদৌস, বিশেষ প্রতিবেদক, উখিয়া নিউজ ডটকম
প্রকাশিত: ২০/০৫/২০২৫ ১০:২১ এএম

মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সংঘাতের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়ে উখিয়ায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা এখন শরণার্থী হিসেবে নই বড় ব্যবসায়ী হিসেবে বসবাস করছে ক্যাম্পে। ইলেক্ট্রনিকস, মোবাইল শপ, কাপড় বিতান, মুদির দোকান, ওষুধের ফার্মেসী, বড় বড় রেষ্টুরেন্ট, চাল, ডালসহ বিভিন্ন কাঁচা তরিতরকারি’র ব্যবসা এখন তাদের হাতে। তাদের এসব ব্যবসার আড়ালে অনেকেই আবার চালাচ্ছে মাদক কারবার।

কাটাঁতারের বাহিরে এসে রোহিঙ্গাদের অবাধে এমন কাজকারবারে স্থানীয়দের ব্যবসা-বাণিজ্য ভবিষ্যতে অন্ধকার বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ। কোন বাধাবিঘ্ন ছাড়া রোহিঙ্গারা এভাবে ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হওয়া ভবিষ্যতের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে বলেও মন্তব্য করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিশেষজ্ঞরা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কুতুপালং বাজারে অধিকাংশ ব্যবসায়ী রোহিঙ্গা। কেউ খুলে বসেছে ইলেকট্রনিকসের বিভিন্ন মালামালের দোকান, আবার কেউ বড় আকারে মোবাইল শপ, কাপড় বিতান, মুদির দোকানসহ অন্যন্য ব্যবসা তো রয়েছেই। স্থানীয় কিছু ব্যক্তির মালিকানায় ট্রেড লাইসেন্স শো করে তারা এসব ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে কোন বাধা বিঘ্ন ছাড়া।

সরেজমিনে কথা হয় ইলেকট্রনিকস ব্যবসায়ী সাদ্দাম নামে এক রোহিঙ্গার সাথে। সে জানায় ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসছে তার পরিবার। এনজিও’র দেওয়া রেশন কার্ডে যা পাই তা দিয়ে সংসার চলতো না। তাই সে কুতুপালং বাজারে ১৫ লাখ টাকারও বেশি ইলেক্ট্রনিকস মালামাল নিয়ে দোকান খুলে বসেছে।

কুতুপালং লম্বাশিয়া রোড়ে এক ফার্মেসী ব্যবসায়ী রোহিঙ্গার সাথে কথা বললে তিনি জানান, রোহিঙ্গা আমি একা নই এইখানে অনেক রোহিঙ্গা ব্যবসা করতেছে। আমি মিয়ানমারের শিক্ষিত ছেলে। আর এইখানে আমি চাকরি করি।

কুতুপালং বাজারে মোহাম্মদ উল্লাহ নামে আরেক রোহিঙ্গা প্রায় ২০ লক্ষ টাকারও বেশি মালামাল নিয়ে মুদি দোকানের ব্যবসা চালাচ্ছে। কাটাতারের বাহিরে এসে এইখানে কিভাবে ব্যবসা করতেছেন এমন কথার উত্তরে চুপচাপ বসে তাকিয়ে তাকে কোন প্রশ্নের উত্তর ও দেননি এই রোহিঙ্গা।

রফিক নামে আরেক রোহিঙ্গা আনুমানিক ১৫ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে কুতুপালং বাজারে ব্যবসা চালাচ্ছে। পার্শ্ববর্তী স্থানীয়রা তাদের ব্যবসার চাপে কাবু হয়ে আধা মরা অবস্থায় প্রতিষ্ঠানে বসে থাকার দৃশ্য লক্ষ্য করা গেছে।

স্থানীয়রা বলছে, রোহিঙ্গারা আসছিল শরণার্থী হয়ে এখন তারা আমাদের সরলতার সুযোগ নিয়ে বড় বড় ব্যবসায়ীর মালিক বনে গেছে। প্রশাসন এসবের কোন ব্যবস্থাও নিচ্ছে না। তাদের থাকার কথা কাটঁতারের ভিতরে তারা এখন লোকালয়ে ভাড়া বাসা ও জমি কিনে বাড়ি করে বসবাস করছে। চারদিকে আমাদের ক্ষতি করে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। এই উখিয়া ইসরায়েল-ফিলিস্তিন হতে আর বেশি সময় নেই এমন মন্তব্যও করেন অনেকেই।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জাতীয় কমিটির মহাসচিব ও পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গারা’ ক্যাম্পে নই সব আকাম কুকাম করতেছে এখন লোকালয়ে এসে। তারা বিভিন্ন ব্যবসার কথা বলে মাদক,চোরাচালানসহ নানা ধরণের অপরাধ কর্মকান্ড চালাচ্ছে। তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অনেক বড়। এইখানে তারা দিন দিন স্ববলম্বী হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের জন্য এটা মোটেও সুবিধাজনক নই। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের গাফলতির কারণে তারা এসব করতে সাহস পাই। বাংলাদেশ সরকারকে এগুলার মাসুল দিতে হবে ভবিষ্যতে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী’র দায়িত্বে থাকা ১৪-এপিবিএন পুলিশের অধিনায়ক সীরাজ আমিন জানান, রোহিঙ্গারা কৌশলে কাটাঁতারের বাহিরে চলে গিয়ে এসব করে। আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী কিছু ঘটালে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, ক্যাম্পের বাহিরে রোহিঙ্গারা কিছু করলে চাইলে উপজেলা প্রশাসন ও ব্যবস্থা নিতে পারেন। ক্যাম্পের ভিতরে হলে সংশ্লিষ্ট সিআইসি ব্যবস্থা নিবে।

এ বিষয়ে কথা বলতে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিও সাড়া মিলেনি।

পাঠকের মতামত

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইমাম প্রশিক্ষণ দেবে তুরস্কের দিয়ানাত ফাউন্ডেশন

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইমামদের প্রশিক্ষণ দেবে তুরস্কের দিয়ানাত ফাউন্ডেশন। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধান ...

বৌদ্ধবিহারে প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপনে ফিলিস্তিন মুক্তির বার্তা

‘ফ্রি প্যালেস্টাইন, স্টপ জেনোসাইড’’—এই বার্তা নিয়ে আকাশে ফানুস ওড়ানোর মধ্য দিয়ে এবার কক্সবাজারের বৌদ্ধবিহারে প্রবারণা ...